বাংলাদেশে আসছে Starlink ইন্টারনেট—স্যাটেলাইট প্রযুক্তিনির্ভর এই পরিষেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও উচ্চগতির কানেক্টিভিটির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। SpaceX কর্তৃক পরিচালিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত, নিরবচ্ছিন্ন ও মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা এলাকাগুলোকেও ডিজিটাল কানেক্টিভিটির আওতায় আনা সম্ভব হবে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজারো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে Starlink বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে, যা এবার বাংলাদেশেও কার্যকরভাবে শুরু হতে চলেছে।
Starlink কী এবং এটি কিভাবে কাজ করে?
Starlink হলো একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Low Earth Orbit - LEO) স্থাপিত হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই স্যাটেলাইটগুলো সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে কভার করে ব্যবহারকারীদের নিরবিচারে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। ট্র্যাডিশনাল অপটিক্যাল ফাইবার বা মোবাইল নেটওয়ার্কের তুলনায় এটি অনেক বেশি বিস্তৃত এবং উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছায় না, কিংবা নেটওয়ার্ক দুর্বল – সেখানে Starlink একটি কার্যকর সমাধান।কখন আসছে Starlink বাংলাদেশে?
২০২৫ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে Starlink-এর বাণিজ্যিক সেবা চালু হবে। ইতোমধ্যে Starlink বাংলাদেশে তাদের ট্রায়াল কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ঢাকায় প্রদর্শনীতে দেখা গেছে ইন্টারনেট গতি ১০০–১২০ Mbps পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে এখন নতুন আপডেট অনুযায়ী, আগামী মে মাসের মধ্যেই Starlink ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার। ২৩ এপ্রিল কাতারে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে এ তথ্য জানানো হয়েছে।স্টারলিংক ইন্টারনেট খরচ ও সেবার ধরন
বাংলাদেশে Starlink ব্যবহার শুরু করতে হলে প্রথমেই একটি Starter Kit কিনতে হবে, যার দাম আনুমানিক $৩৪৯ থেকে $৫৯৯ (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪২,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা)। এই কিটে থাকবে স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার ও ইনস্টলেশন ক্যাবল। এছাড়াও মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি আনুমানিক $১২০, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৪,৬০০ টাকা। যদিও এটি কিছুটা ব্যয়বহুল, তবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে খরচ কমার সম্ভাবনা রয়েছে।স্টারলিংক এর গতি কত?
বাংলাদেশে Starlink ইন্টারনেট চালু হলে ব্যবহারকারীরা গড়ে ৫০ Mbps থেকে ২০০ Mbps পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড পেতে পারেন। আপলোড স্পিড হতে পারে ২০ Mbps থেকে ৪০ Mbps পর্যন্ত। তবে আবহাওয়া ও লোকেশনভেদে এই গতি কম-বেশি হতে পারে। রিমোট এলাকায় এই স্পিড বাংলাদেশে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।
স্টারলিংক ইন্টারনেটের অন্যতম সুবিধা সমূহ:
Starlink-এর অন্যতম বড় সুবিধা হলো এর স্বাধীন ও বিকেন্দ্রীকৃত কাঠামো। এটি কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ কিংবা প্রতিবাদের সময়েও ইন্টারনেট সংযোগ সচল থাকে। এই বৈশিষ্ট্য সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, এনজিও, জরুরি পরিষেবা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Starlink বাংলাদেশের ইন্টারনেট ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে। যদিও এটি এখনো সবার নাগালের মধ্যে নয়, তবে আগামী দিনে এই প্রযুক্তি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।সূত্রঃ ক্লিক করুন