মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপের ফলে বাড়ছে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম। গত ২রা জুন, সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইলফোনের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর এই নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদক ও আমদানিকারকদের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট হার ২.৫ শতাংশ করে বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।
এছাড়াও বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে ভ্যাটের চাপ শামাল দিতে বেড়ে যেতে পারে মোবাইল ফোনের দাম।
বছর তিনেক আগে কিছুদিন মোবাইল ফোন উৎপাদন প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ করমুক্ত। কিন্তু এরপর থেকেই মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারকদের ওপর ভ্যাটের চাপ লাগাতার বেড়েই চলেছে।
বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। আর সুবিধাটি কমিয়ে এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
তিনি আরও জানান, মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই সুবিধা কমানো হয়েছে। তবে কতটুকু কমানো হয়েছে, তা এখনও জানানো হয়নি।
নতুন বাজেট প্রস্তাবে মোবাইল হ্যান্ডসেটের ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে শিগগিরই বাজারে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে করে পছন্দের ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের মোবাইল কিনতে গেলে বেশি টাকা খরচ করতে হতে পারে কাস্টমারদের!
বর্তমানে স্থানীয়ভাবে দুটি উপাদান কেসিং ও চার্জার তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট হার ৫ শতাংশ, আর পুরোপুরি আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানের জন্য তা ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী, এই হার বেড়ে যথাক্রমে সাড়ে ৭ শতাংশ ও ১০ শতাংশে উন্নীত হতে যাচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্পে ভ্যাট ফাঁকি রোধ এবং রাজস্ব আয়ে ভরসা বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত তিন বছর ধরে এ খাতে ভ্যাটের চাপ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে—যেখানে অতীতে এটি করমুক্ত ছিল।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে প্রযুক্তিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর সাধারণ মানুষের ডিজিটাল সুবিধা গ্রহণের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নিম্নআয়ের মানুষের প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রভাব পড়বে।
২০২৪ সালে দেশে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৭.৯ মিলিয়ন ইউনিট। তবে আসন্ন এই চাপের কারণে চলতি বছর এর পরিমাণটা আরও কমে আসতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা!
তবে শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর মতে, ‘আমি মনে করি ভোক্তা পর্যায়ে এর কোন প্রভাব পড়বে না। উৎপাদন পর্যায়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারকদের লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে, তবে সেটাও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। বেশিরভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক প্রায় ৩০% মূল্য সংযোজন করে, এবং ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে এত বেশি ব্যয় হয় না। তাই আমার ধারণা, ব্যবসায়িক পর্যায়েও এর কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।’
সোর্চ : ক্লিক করুন